আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া

আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া

বড় হতে হতে টের পাই, আমাদের অন্যতম প্রধান কৌতুহলের নাম যৌনতা। যা খুব ঢেকে রাখার একটা জিনিস, আড়ালে আবডালে লুকিয়ে রাখার ব্যাপার। বড়রা যখন ইশারা ইঙ্গিতে নিজেদের মধ্যে দুষ্টুমি করতে থাকে, তা দেখে নিজের ভেতরে আরো বেশি কৌতুহল লুকিয়ে রাখার জিনিস। যে কৌতুহল লুকিয়ে রাখতে হয়; প্রকাশ্যে প্রকাশ করতে নেই, প্রশ্ন করতে নেই। শুধু ফিসফিস করে বন্ধুদের সঙ্গে গোপনে আলাপের বিষয় এটা। আচমকা একটা ন্যাংটো মেয়ের ছবি দেখে ফেললে হা হয়ে তাকিয়ে থাকার ব্যাপার। আর প্রথমবার যখন নিজের শরীর জাগে, তখন অজানা এক শিরশিরে অনুভূতিতে বিহ্বল হওয়ার ব্যাপার। তখনো আমাদের ‘এসব ব্যাপার স্যাপার’ জানার কোনো সুযোগ থাকে না। মেয়েরা আর মেয়েদের শরীর তখন হয়ে যায় লুকিয়ে লুকিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার ‘জিনিস’। সে এক দারুণ কৌতুহল আমাদেরকে ঘিরে ধরতে থাকে সেই ছোটবেলা থেকে।

এই কৌতুহল আর নিষেধাজ্ঞা আমাদেরকে ব্যাপারটার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী করে তোলে। গুপ্তধনের মতো আকর্ষনীয় করে তোলে। যেহেতু স্বাভাবিক উপায়ে এই কৌতুহল মেটানোর কোনো সুযোগ আমাদের থাকে না, উপায় থাকে না জানার, তাই আমাদের এগিয়ে যেতে হয় আরো নিষিদ্ধ কিছু উপায়ের দিকে। আমরা বদ্ধ দরোজার ফুটোয় উঁকি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি ব্যাপারটা, বালিকার জামার ফাঁক ফোকরেও আমাদের চোখ পাততে হয়। কখনো পাততে হয় হাত। বয়সে বড় কাজিন বা কাজের ছেলেটি আমাদের এসব কৌতুহল মেটাতে এগিয়ে আসে। আর তাতে করে তার জীবনের ভুল শিক্ষাগুলো আরো রঙে চড়ে আমাদের জীবনের ‘শিক্ষা’ হয়ে জোটে।

জ্ঞান আহরণে আমরা দ্বারস্থ হই চটি পুস্তকের, লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ি রসময় গুপ্তর রসময় সব লেখা। এক টিকিটে দুই ছবি দেখি, ভিডিওতে থ্রি এক্স সিনেমা দেখে আমরা জ্ঞানী হই। আগের প্রজন্মের ভুল শিক্ষা, গুপ্তচটিবই আর এক্সরেটেড সিনেমা গড়ে দেয় আমাদের যৌন জ্ঞানের ভিত্তি। গুপ্ত স্যার আমাদেরকে শিখিয়ে দেন নারী মাত্রই ভোগ্যবস্তু, সে মা মাসী যে-ই হোক! নেহায়েৎ অতোটা পারি না, তাই মা মাসী রক্ষা পেয়ে যান। কিন্তু পাশের বাড়ির ভাবী, বড়বোনের বান্ধবী, কাজের মেয়ে, নিজের খেলার সাথী, কাজিন সবাইকে আমরা ভেবে নেই চটিবইয়ের চরিত্র, যারা হাত বাড়ালেই শুয়ে পড়তে রেডি! আমাদের রাতের স্বপ্নে আর দুপুরের বাথরুমে হাজির হয় মাধুরী, ক্যাটরিনা, বিপাশা বসুরা; কখনো কখনো চেনা আকাঙ্খিত নারীরা। মনে মনে সঙ্গম চলে, কল্পনার নারী জানতেই পারে না। আহ্ কি সুখ! আমরা বড় হতে শুরু করি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নয়, মেয়েদের বুকের দিকে তাকিয়ে। আমরা মনে বড় হই না, বড় হই যৌনচিন্তায়।

আর আমরা বড় হতে হতে ‘স্বাধীন’ হতে শিখি। পাড়ার গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে ধুম্রশলাকা পান করতে করতে যদি পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েটার শরীর চোখ দিয়ে খেয়ে নিতে না পারি, তাহলে আমাদের হীনমন্যতাবোধ হয়। মনে হয় আমরা বুঝি অতোটা বড় হতে পারিনি এখনো। চোখ দিয়ে দেখে মেয়েটার বুকের মাপ বলে দিতে না পারলে বন্ধুমহলে কদর বাড়ে না আমাদের। মেয়েদেরকে টিজ করতে না পারলে নিজেকে পুরুষ বলে মনেই হয় না। আমরা বড় হয়ে উঠি অশ্লীল গালি মুখে নিয়ে। দ্বিধাহীন কণ্ঠে ‘তর মায়রে চুদি’ বলতে না পারলে আমি কোন্ বালের পুরুষ হলাম?! আমাদের মজার কৌতুক, রসিকতা সবকিছু যৌনতা আর নারীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে। নারী হয়ে ওঠে আমাদের প্রধানতম বিনোদন। নারীর যে এতে বড্ড অবমাননা হলো; তা আমাদের নজরে আসে না, মননে তো নয়ই। কারন আমরা জানি এভাবেই একটা ছেলে বড় হয়ে ওঠে, এভাবেই ‘পুরুষ’ হয়ে উঠতে হয়। নারীকে অবমাননা না করা পর্যন্ত পুরুষ হতে শিখি না আমরা। আমাদের শিক্ষা, আমাদের সামাজিকতা আমাদেরকে এভাবেই তৈরি করে দেয়। এটাকেই নিয়তি জানি আমরা।

একই সমান্তরালে আমাদের সমবয়সী মেয়েটা, যে আমাদের সঙ্গেই খেলতো, সে একসময় ধীরে ধীরে নিজেকে আড়ালে লুকিয়ে নিতে থাকে, লুকিয়ে থাকতে শেখে। আমরা যখন শিখেছি নারীর গোপনে উঁকি দিতে হয়; তখন তার মা, খালা, চাচী, বড়বোন সবাই তাকে শিখিয়েছে ‘ঢেকে রাখ’। যখন আমরা শিখেছি চান্স পেলেই চামে হাতিয়ে নিতে হবে নারীর শরীর; তখন তার মা-খালা তাকে শিখিয়েছে পুরুষ হাতিয়ে দিলেও চুপ করে থাকতে হবে, কাউকে কিচ্ছুটি বলা যাবে না। নিজের ভেতরে কান্নায় ডুবে যেতে হবে, মরমে মরে যেতে হবে। এটাই নিয়ম। নারীকে চুপ করে থাকতে হয়, চুপ করে রাখতে হয়।

এই ‘সিস্টেম’ থেকে যে মেয়েরা বের হতে চায়, তাদেরকেও আমরা ‘আমাদের সিস্টেমে’ ফেলে দেই। আমাদের মতো করে সিগারেট খাও, আমাদের মতো করে গালি দাও, মেতে ওঠো অশ্লীল কৌতুকে, তাহলেই তুমি আমাদের মতো হতে পারবে, আধুনিক হতে পারবে। নইলে তুমি আনস্মার্ট। আর কোনো ছেলে যখন আমাদের মতো এগুলোতে মাতে না, তখন আমরা তাকে বলি মাইগ্যা। এই স্ট্যান্ডার্ডগুলো আমরাই ঠিক করে দেই। যেভাবে একজন আদিবাসী তরুণ নিজের পোশাক, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ছেড়ে আসতে পারলে আমরা তাকে বন্ধু হিসেবে মেনে নেই। আমাদের মতো সার্ট প্যান্ট পরলে, বাংলা ইংরেজি মিশিয়ে কথা কইলে, ফ্রায়েড রাইস খাইলেই কেবল সে আমাদের সমকক্ষ হতে পারে। নারীর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেরকম।

বড় হতে হতে ক্রমশ আমরা কামুক হতে থাকি। পত্রিকায় শবমেহের নামের কিশোরী মেয়েটির ধর্ষণের খবর পড়ে আমাদেরও মনের ভেতর লালসা উঁকি দেয়। মনে মনে বলি “আহা, আমি যদি শবমেহেরের প্রথম ধর্ষনকারী হতাম!” (পোস্টমর্টেম: রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ)
সেই দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে, গলায় টাই পেঁচিয়ে আমরা অফিসে যাওয়ার সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া স্কুলবালিকার বুকের দিকে জুলজুল করে তাকাই। চান্স পেলে একটু হাতিয়েও দেই।

বড় হতে হতে আমরা জেনে যাই পুরুষ আর নারীর বেড়ে ওঠার এটাই প্রচলিত নিয়ম, এটাই সিস্টেম, এটাই রীতি, এভাবেই হয়ে আসছে এতোকাল। পুরুষ যা খুশি তা করবে, তার সব মাফ। ‘ব্যাটাছেলেরা এরকম একটু আধটু করেই’। লজ্জা কেবল নারীর ভূষণ। এভাবে পৃথিবীর বিশাল বনে পুরুষ ধীরে ধীরে বাঘ হয়ে যায়, নারী সেখানে মায়া হরিণ। আপনা মাংসে হরিণা বৈরী।

সবচেয়ে ক্ষতিটা হয় বন্ধুত্বে আর মানসিকতায়। বড় হতে হতে ছেলে আর মেয়েগুলো আলাদা হয়ে যায়, বন্ধু হয় না। পড়তে হয় আলাদা, খেলায় হয় আলাদা। চিন্তা ভাবনার জগৎটা সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হাঁটে, রেল লাইনের মতো। মেলে না আর। বেড়ে ওঠার বয়সে দূরত্ব বাড়তে থাকে ভীষণ। এই দূরত্ব তৈরি করে আরো বেশি কৌতুহল, আরো বেশি ভুল জ্ঞান। যে দূরত্ব পরে আর কখনোই দূর করা হয়ে ওঠে না, আরো বেশি বেশি করে বাড়তেই থাকে কেবল। নারীকে কখনো জানা হয়ে ওঠে না পুরুষের, পুরুষকে নারী জানতে পায় কদর্য হাতের মাপে।

তেমনি জানা হয়ে ওঠেনা যৌনতাকেও। আমাদের কাছে দিনে দিনে নারী হয়ে ওঠে একটা এভারেস্ট। যার উপরে উঠে পতাকা গাড়লেই জয় করা হয়ে যায় আমাদের। এরকমটাই চিন্তা আমাদের গড়ে ওঠে। পুরুষের একপেশে চিন্তার জগতে নারী ততোদিনে অনেকটা জড় পদার্থের মতোই হয়ে গেছে। নারীর কোনো অনুভূতি তার আর প্রয়োজন হয় না। নারী-বন্ধু-সঙ্গবিবর্জিত পুরুষ যৌনানন্দটুকু খুঁজে নিতে শিখেছে একা একা, হস্তমৈথুনে। ছোটবেলা থেকে যৌনতায় নারীর অংশগ্রহণ কল্পনায় পেতে পেতে পুরুষ একসময় অভ্যস্ত হয়ে যায়। যৌনতায় নারীর বাস্তব অংশগ্রহণ অপ্রয়োজনীয় বা অদরকারী মনে হতে থাকে। আর তাই ভীড় বা অন্য সুযোগে হাতিয়ে নিলেই তার আনন্দসুখ জোটে, নারীর অংশগ্রহণ আর অনুভূতি কল্পনায় যোগ করে নিতে অসুবিধে হয় না। অথবা ছুঁতে না পারলে চোখ দিয়ে চেটেপুটে খেয়ে বাথরুমে গিয়ে জাবর কাটে আর হাত মারে। পুরুষ ধীরে ধীরে কল্পিত নারীর সঙ্গে যৌনসুখে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এই অভ্যাসটা কখনো কখনো ভয়াবহ রূপ নেয়। বিবাহিত পুরুষ স্ত্রী সহবাসে তৃপ্তি পায় না, পাশাপাশি তাকে হস্তমৈথুনের অভ্যাস চালিয়ে যেতে হয়।

অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের জানা হয়ে ওঠে না যে ব্যাপারটা আম জাম লিচু খাওয়ার মতো একপাক্ষিক না। জানা হয় না যে এ এক দারুণ সুখের অনুভূতি, যা দুজনে মিলে রয়েসয়ে উপভোগ করতে হয়। একজনের অনুভূতি সামান্য কম থাকলেও ব্যাপারটা আনন্দময় হয় না।
ছোটবেলা থেকে বড় হওয়াতক এই ‘একলা ভোগেই তৃপ্তি’ পাওয়ার শিক্ষা আমাদেরকে সারাজীবনের জন্য যৌনতার অপার্থিব আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে দেয়! নারীকেও, পুরুষকেও… মানুষকে। পুরুষ তখন যৌনতৃপ্তির চেয়ে ভোগদখলকৃত নারীর সংখ্যা গোনে। ‘তুই যতোজন মেয়ের সাথে কথা কইছস, তারচেয়ে বেশি মেয়ের সাথে আমি শুইছি। জানস?’ এরকম গর্ব করার ‘পুরুষ’ আমাদের আশেপাশেই আছে। তাদের জন্য দুঃখই হয়।

আর এসবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে দাম্পত্যে। সমাজ নানাবিধ শর্তের বিনিময়ে যখন দু’জন মানুষকে এক ছাদের নিচে এক বিছানায় পাঠিয়ে দেয়, তখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে এই দু’জনের পার্থক্য। বাঘে মহিষে একঘাটে জল খাওয়ার মতো দু’টো অচেনা অজানা প্রজাতির প্রতিনিধি বাস করতে থাকে পাশাপাশি। সন্তান জন্ম দেয় আর সুখের ভান করতে থাকে। বছরের পর বছর সঙ্গম করে যায়, বাচ্চা পয়দা হয়, কিন্তু তৃপ্তি হয় না সুখ হয় না। দীর্ঘদিন প্রেম করে বিয়ে করলেও এই গ্যাপ থেকে যায়। স্বামী স্ত্রীকে আর স্ত্রী স্বামীকে কিছুটা জানলেও ‘নারী আর পুরুষ’ স্বত্ত্বা যে পরষ্পরকে চেনে জানে না? যৌনতার স্বাভাবিক জ্ঞান যে নেই। পুরুষ নারীর কাছে খোঁজে পর্নস্টারের পারদর্শিতা, কল্পনায় আঁকে সানী লিওনিকে। নিজের মাপটা তার জানা নেই। নারী কি খোঁজে? সেই খোঁজ পুরুষের অজানা থেকে যায়।

শেষ পর্যন্ত তাই অনেক ক্ষেত্রে দাম্পত্যের সঙ্গী হয় অতৃপ্তি। তারপর সেই তৃপ্তির খোঁজে আবারো এদিক সেদিক হাতড়াতে থাকে পুরুষ আর নারী। ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়। এমনি মায়ার ছলনা। এরা ভুলে যায়, কারে ছেড়ে কারে চায়। তাই কেঁদে কাটে নিশি, তাই দহে প্রাণ, তাই মান অভিমান, তাই এত হায় হায়।‘ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
হায় হায় করতে করতে, অতৃপ্তি নিয়ে একসময় আমরা মরে যাই পরকালের আশায়।

শুধু ব্যক্তিজীবনে না, এই প্রভাব কর্মজীবনে থাকে, থাকে নাগরিক জীবনে। বেড়ে ওঠার কালে যে দূরত্ব আর অভ্যাস তৈরি হয়েছিলো, সেগুলো বড় হয়েও ছেড়ে যায় না পুরোপুরি। রিকশায় পুরুষ ডানদিকে বসে, নারী বসে বামপাশে; তার নাম যে বামা! আমরা সর্বত্র নারীকে দেখি রমণযোগ্য হিসেবে, তার নাম যে রমণী! অধিকারের বেলায় অর্ধেক দেই; সে যে মানুষ না, মেয়ে-মানুষ! আলোচনায় তাকে কথা বলতে দেই না বা তার কথায় গুরুত্ব দেই না, তার নাম যে অবলা! তাকে বাইরে আসতে দেই না, সে যে অন্তঃপুরবাসিনী! বিশ্বাস না হয় তো শাস্ত্র দেখুন জনাব হাসি

আমরা জানি সেই প্রচলিত ছড়াটা “নারী, তুমি যতোই করো বড়াই; বিয়ার পরে রান্নাঘরে, ঠেলতে হবে কড়াই”। অথবা মতিকণ্ঠের ভাষায় “নারীর সঙ্গে দেখা হবে রুটি বেলার কাঠে, কাপড় কাচার ঘাটে, রাইতের বেলা খাটে। এর বাইরে আর কুথাও নারী দেখলেই মাইর”। এ-ই আমাদের শিক্ষা।

আমরা জানি নারীকে হতে হবে লক্ষ্মী, অসূর্যম্পশ্যা। সুন্দরী, সতী। আমরা বার বার অন্ধকারে তার দিকে বাড়িয়ে দেবো আগ্রাসী হাত, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করে তাকেই বার বার দিতে হবে সতীত্বের অগ্নিপরীক্ষা। এটাই সিস্টেম, এটাই রীতি, এটাই নিয়ম। এভাবেই আমরা শিখে এসেছি, জেনে এসেছি এতোকাল। অন্যথা হতে নেই। অমঙ্গল হয়। অমঙ্গলের যাবতীয় দায় নারীর। অমুক এলাকায় কলেরা লেগেছে? কোনো এক নারীকে ডাইনী আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে দাও, ঝামেলা মিটে যাবে। যুদ্ধ করবে? বীরের খেদমতে বিছানায় যেতে হবে নারীকে। বীরের শরীরে আনন্দ দেওয়ার দায় নারীকে নিতেই হবে। নাগরিক আর পরিব্রাজকের যৌনতার দায় মেটাতে নারীকে হতে হবে বেশ্যা। উৎসবে আনন্দে পুরুষের হাত গায়ে মেখে নিয়ে কেঁদে ফিরতে হবে নারীকেই। থার্টি ফার্স্ট নাইটে, পহেলা বৈশাখে, বই মেলায়, স্বাধীনতা দিবসে… শাহবাগ থেকে মার্কিন সৈকত… সর্বত্র! বছরের পর বছর ধরে ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সবখানে এভাবেই হয়ে এসেছে। তাই এটাই জগতের নিয়ম হয়ে গেছে।

নারীর স্বীকৃতি কেবল রূপে আর শারীরিক সৌন্দর্যে। তাকে বিউটি পার্লার থেকে সাজিয়ে, সুন্দর পোশাকে আর অলঙ্কারে অপরূপা হয়ে আমাদের সঙ্গী হিসেবে শোভা বাড়াতে হয়। পার্টিতে আমার ‘মিসেস’ হতে হয়। অফিসের ফ্রন্ট ডেস্কে বসতে হয়, কাস্টোমার কেয়ারে সুললিত কণ্ঠ হতে হয়। এমনকি মিছিলের আগেও থাকতে হয় পিটুনি খেয়ে মিডিয়ার খোরাক হওয়ার জন্য। আর বিজ্ঞাপনে পণ্য হতে হয়। এরকম অসংখ্য, অগুনতি।

সবখানে নারীকে আমরা দমিয়ে রাখি। আর আমরা বলি ‘এগুলো’ পুরুষের ‘অবদমিত কামনা বাসনা’র ফল। তাহলে নারীর অবদমিত কামনা বাসনা কোথায় গেলো? তার ফল কেন পৃথিবী ভোগ করে না? এই যে শুরু থেকে বলে আসছি কৌতুহল ইত্যাদির কথা, কৌতুহল কি শুধু পুরুষেরই ছিলো? নারীর কৌতুহল ছিলো না? পুরুষের যেমন উঁকি দিয়ে, হাতিয়ে ‘জ্ঞান আহরন’ এর ইচ্ছে হয়, নারীর জ্ঞান তবে কোথা হতে আসবে? নারীকেই কেন তার সবটুকু কৌতুহল লুকিয়ে রাখতে হবে? দমিয়ে রাখতে হবে? আবার অদমমিত কামনা বাসনার ফলটুকুও লুকোতে হবে?

হ্যাঁ হবে, হচ্ছে। কারন ঐ যে ‘লুকিয়ে থাকো, লুকিয়ে রাখো, চুপ করে থাকো’ নীতিশিক্ষা আমাদের।

এই চর্চাটা একদিনে গড়ে ওঠেনি। মানুষ সবকিছু অধিকার করতে চায়, জোর দিয়ে মুল্লুক দখল করে নেয়। যেভাবে মানুষ সমস্ত প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছে, সেভাবে একে একে মানুষকেও মানুষ নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাসে নিয়ে আসে। এক জাতি আরেক জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করে, এক গোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠীকে। অস্ত্র, রাজনীতি আর ধর্ম ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ আর দখলের এই অপসংস্কৃতি অবিরাম চলে। আর সেই হিসেবমতো মানব জাতির অর্ধেকের ওপর নিয়ন্ত্রণ আর দখল প্রতিষ্ঠা করা যায় শুধু নারী বলে তাদের দমিয়ে রাখতে পারলে। নারীর মাতৃত্ব সংক্রান্ত ইস্যুগুলো এই কাজে পুরুষকে খুব সাহায্য করে। পিরিয়ডের ছুঁতোয়, মাতৃত্বকালীন দায়িত্বের ছুঁতোয় তাদেরকে ঘরের ভেতর আটকে দেওয়া যায়।

ধীরে ধীরে নারীর দায় হয়ে ওঠে মনোরঞ্জনের। দায়িত্ব হয়ে ওঠে কোমলতার। শরীর ভরে উঠতে থাকে পেলবতায়। নারী অভ্যস্ত হতে থাকে এই রীতিতে। আর আমরা জানি শুধু এভাবেই এক ধাক্কায় অর্ধেক ‘মানুষ’কে দখল বাণিজ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। বাকি অর্ধেকের মধ্যে চলতে থাকে মারামারি কাটাকাটি। ২০১১-এর আদমশুমারীর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী পুরুষ ও নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার এবং ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার। এই অর্ধেক নারীকে ঘরে আটকে রাখতে পারলে পুরুষ জাতের খুব সুবিধা হয়, অহেতুক প্রতিদ্বন্দ্বী বাড়ে না। আর এই কাজে ব্যায়ও নেহায়েত কম না। সম্প্রতি কেয়ারের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশে শুধু নারী নির্যাতনের কারণে প্রতি বছর ১৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা খরচ হয়। যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। বুঝুন অবস্থা!

নারী আর পুরুষের অসম পৃথিবীর বয়ানের জন্য একটা ব্লগ খুব সামান্য জায়গা, কোটি কোটি অক্ষর লিখলেও এর শেষ নেই। যেমনি শেষ নেই নারী অবমাননার গল্পের। গত ক’দিন ধরে সচলায়তনে অনেক ঘটনা উঠে আসছে, কিন্তু তা প্রকৃত পরিস্থিতির তুলনায় দশমিক এক ভাগও না। এই পৃথিবীর ঘরে ঘরে নারীর শরীরে শরীরে লেগে আছে এরকম কোটি কোটি ক্ষত। কিন্তু কেউ বলে না। ঐ যে লুকিয়ে থাকা আর লুকিয়ে রাখার শিক্ষা আমাদের রপ্ত হয়ে গেছে!

আজ মানুষ জানছে যে লুকিয়ে রাখার কিছু নেই, চুপ করে থাকার কিছু নেই। লুকিয়ে থাকতে থাকতে, চুপ করে থাকতে থাকতে অবস্থাটা এখন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। আজ তাকে মুখরা হতেই হবে। আজ হোক কাল। তবে আজই শুরু হোক?

ব্রা’র স্ট্র্যাপ দেখা গেলে ‘তোর তাতে কী?’ বলার সময় এসেছে। যৌনতা নারীর পোশাকে না, পুরুষের চোখে আর মননে; একথা বলার সময় হয়েছে। নজর আর মনন শুদ্ধি অভিযানের সময় এসেছে, পোশাকের না। পিরিয়ডকে নারীর লজ্জা ভাবার সময় শেষ হয়েছে, জীবনের একটা স্বাভাবিক অংশ হিসেবে দেখার সময় হয়েছে। মাতৃত্বকে অসুস্থতা বলার নির্বোধ চর্চা থেকে বের হয়ে আসার সময় হয়েছে। আর সময় হয়েছে নারীকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার। সময় হয়েছে আরো অনেক কিছুর। খুব কঠিন কিছু না, শুধু দৃষ্টিভঙ্গিটুকু বদলাতে হবে।

চর্চাটা দিকে দিকে শুরু হয়েছে, অনেক বছর ধরেই চলছে। তবু আজ সচলায়তনে যারা বলছেন, তাঁরা অনেকেই প্রথমবারের মতো বলছেন। যে নারী আজ মুখ ফুটে বলছেন তার ছোটবেলার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা, তিনি হয়তো আর প্রতিকারের আশা করেন না; কিন্তু তাঁর সন্তান যেন একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে না যায়, তাঁর সন্তান যেন দুধে ভাতের পাশাপাশি নিরাপদেও থাকে, সেই পৃথিবীটা তৈরি করার ইচ্ছেটা তাঁর আছে। আর এজন্যই চুপ করে না থেকে, লুকিয়ে না রেখে বলার চর্চাটা আজ জরুরী। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা ‘চুপ করে থাকা, লুকিয়ে থাকা’র চর্চা থেকে বের হয়ে আগামী প্রজন্মকে সরব হতে শেখাটা জরুরী।

পাশাপাশি এতক্ষণ যে ‘আমাদের’ কথা বলে গেলাম, তা কি দোহাই?
না।
স্বীকারোক্তি। এই সমাজ আর শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের ভেতরে সেই ছোটবেলা থেকে যে ভুল জ্ঞান, চর্চা, অভ্যাস ইত্যাদি ঢুকিয়ে দিয়েছে; যে অসুস্থ সংস্কৃতি নারীকে হরিণ আর পুরুষকে বাঘ বানিয়ে দিয়েছে, আমাদেরকে নারীর বন্ধু না বানিয়ে শত্রু বানিয়ে দিয়েছে, বর্বর বানিয়ে দিয়েছে, সেই চর্চা থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। এই গ্লানির জীবন থেকে আমরা বের হয়ে আসতে না পারলে আমাদের সন্তানেরা এই পৃথিবীতে নিরাপদ থাকবে না। আমাদের সন্তানরা যেন এই অসুস্থ সংস্কৃতির ধারক না হয়, সেই চেষ্টা শুরু করতে হবে আমাদের প্রত্যেকের।
একইভাবে পুরুষ শিশুর ওপর যৌন নিগ্রহের ঘটনাও নেহায়েত কম না। সেখানে নারী কখনো কখনো বাঘ হয়ে ওঠে, পুরুষ হয়ে যায় হরিণ। এই সবকিছুর জন্য অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে ‘যৌন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান’ এর অভাবটাই মূলত দায়ী।

একসময় পৃথিবীর মানুষ জানতো পৃথিবীটাই সব; সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র সবই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে ঘুরে মরে। কিন্তু যখন জানা গেলো চরম সত্যটা, তখন অনেক কষ্টে আর প্রাণের বিনিময়েও শেষ পর্যন্ত সত্যটা প্রতিষ্ঠা করা গেছে পৃথিবীতে। তার জন্য পাল্টে ফেলতে হয়েছে যাবতীয় জ্ঞান, ইতিহাস, চর্চা, অভ্যাস, কেতাব সবকিছু।
নারী পুরুষের এই দ্বান্দ্বিক জীবনযাত্রা থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে পাল্টে ফেলতে হবে সকল ধ্যান ধারনা, প্রচলিত রীতি নীতি। এই চর্চা আর সংগ্রামে নারী মাথা উঁচু করে যোগ দিক, মাথা নিচু করে ক্ষমা চেয়ে পুরুষও যোগ দিক। নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার শুরু হোক হাতে হাত রেখে।

কিভাবে হতে পারে? নতুন যে শিশুটি পৃথিবীতে আসছে, যে অতিক্রম করছে কৈশোর, তাদের সবাইকে যৌনতা আর মানবিকতার সঠিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার ইত্যাদির অপেক্ষায় বসে না থেকে ঘর আর পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে সবার আগে। যৌনতার প্রাথমিক ধারণা আর নারী-পুরুষের শারীরিক পার্থক্যগুলোর প্রাথমিক শিক্ষাটুকু পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া গেলেই কৈশোরের ভয়াবহ কৌতুহলের স্পৃহাটুকু যৌনতার খোঁজে উঁকি দিয়ে না কাটিয়ে অন্য অনেক দরকারী জ্ঞান আহরণে সে কাজে লাগাতে পারবে।

লাখ লাখ বছর ধরে যে চর্চা আর অপব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা একদিনে নির্মূল হয়ে যাবে তা ভাবি না। হয়তো কয়েক প্রজন্ম লাগবে। এখনো মা তাঁর কন্যা সন্তানকে শিখিয়ে দেবেন পুরুষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল। আমরা বুঝতে চেষ্টা করবো আমাদের কোন আচরণটা নারীর জন্য অবমাননাকর। কোন রসিকতাটা মজার হলেও, সবাই খুব তারিফ করলেও মেয়ে বন্ধু/কলিগের জন্য অপমানকর, তা বুঝতে চেষ্টা করবো। একদিনে হবে না, চেষ্টা করবো দ্রুত শিখে নিতে। আর শিক্ষাটা পরবর্তী প্রজন্মে ছড়াতে। তবে এমন একদিনের স্বপ্ন আমরা দেখতে চাই যেদিন এই পৃথিবীর কোনো শিশু/নারীকেই আক্রমণ করবে না কোনো কদর্য হাত। নারী আর পুরুষ খুঁজে পাবে স্বাভাবিক সুস্থ আনন্দময় জীবন। সম্ভব, খুব অসম্ভব না। এখন থেকে মিলেমিশে ঘরে ঘরে এই চর্চা শুরু করলে অবশ্যই সম্ভব। শুরু হোক।

শেষ করি দু’টো ছোট্ট ঘটনা দিয়ে।
ক) পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে নারীর প্রতি যৌন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আরেক বৈশাখ উদযাপনের ডাক এসেছিলো কিছুদিন আগে। সেখানেই একজনের কণ্ঠে শুনেছিলাম একটি কথা, হয়তো দুষ্টুমি করেই বলছিলেন ‘আমরা নারী, আমরাও মারি’। চমকে উঠিনি, দারুণ ভালো লেগেছিলো।

খ) পুরনো বইয়ের দোকানে বই খোঁজা আমার অন্যতম একটা শখ। এই করতে করতে সেদিন অসামান্য দু’টো বই পেলাম। আবুল হাসানাৎ রচিত দুই খণ্ডের “যৌন বিজ্ঞান”। বাংলা ভাষায়, এই বাংলাদেশে প্রায় বারোশো পৃষ্ঠাব্যাপি বিশাল গবেষণাগ্রন্থ লিখিত এবং প্রকাশিত হয়েছিলো সেই ১৯৩৬ সালে! এই তথ্য আমার জানা ছিলো না। বই দু’টোর সূচীপত্র পড়েই চক্ষু চড়কগাছ। বাংলা ভাষায় যৌন বিষয়ে এতো সমৃদ্ধ গবেষণামূলক বই আর চোখে পড়েনি আগে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এই বই বাঙালির ঘরে ঘরে সমাদর লাভ করার আশা প্রকাশ করেছিলেন!

তবে তারচেয়ে ভালো লেগেছিলো বইটির যিনি মালিক তাঁর বিকশিত চিন্তার দেখা পেয়ে। বাংলাদেশের মফস্বল অঞ্চলের এক কলেজের জনৈক অধ্যাপক এই দু’টি বই ১৯৮১ সালে কিনেছিলেন তাঁর একমাত্র কন্যার জন্য। বইয়ের মলাট ওল্টাতেই লেখা ‘আমাদের একমাত্র মেয়ে ………..র জন্য সংগৃহীত।‘ পরের পৃষ্ঠা ওল্টালে দেখা যায় মেয়ের নামাঙ্কিত সিলমোহর। ভালো লাগে, ভীষণ ভালো লাগে। আমাদের ঘরে ঘরে এরকম সমৃদ্ধ বাবা মা থাকুক, সন্তানেরা নিরাপদে থাকবে।

……………………………………………

[বি: দ্র:

  • এটা একটি পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার লেখা। এখনো মানুষ হয়ে উঠতে না পারার বেদনা নিয়ে বড় হওয়া এক অক্ষম পুরুষের নিজের বেড়ে ওঠা, চর্চা এবং উপলব্ধির মাপে চিন্তা করা কিছু কথা। অনেক কিছুর সঙ্গেই অনেকের দ্বিমত হওয়ার কথা, হওয়াটাই স্বাভাবিক, দ্বিমতটা জরুরীও। তর্ক হোক, তর্কটাও জরুরী। সবশেষে একটা উপায় বের করতে হবে আমাদেরকেই।
  • লেখায় শব্দচয়ন, বাক্যগঠনেও ভুল থাকতে পারে বিস্তর। বানানেও। শুধরে দিন।
  • কেউ যদি কোনো শব্দচয়নে কষ্ট পেয়ে থাকেন, অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। একসময় ক্লান্তি ভর করেছিলো একটানা লিখতে লিখতে। অসচেতনতায় ভুল কিছু হয়ে থাকতে পারে। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ব্যাপারটা অনিচ্ছাকৃত। শুধরে দিন।
  • আরো অনেক কিছু হয়তো বলার ছিলো, ক্লান্তি আর সময়াভাবেই গুছিয়ে উঠতে পারিনি। লেখার আগে যা যা ভেবে রেখেছিলাম, তার অনেক কিছুই লিখতে গিয়ে ভুলে গেছি। অনেক প্রয়োজনীয় প্রসঙ্গ তোলাই হয়নি। একই অজুহাতে কিছু প্রসঙ্গ খুব দ্রুত আর সংক্ষেপে সারতে হয়েছে। জানি না ঠিকমতো বোঝাতে পারলাম কি না। অন্তত ভুল বোঝাবুঝি না হোক।
  • প্রচুর পরিমানে ‘আমাদের’ শব্দটার ব্যবহার করেছি। যা খুবই আপত্তিকর রকমের সাধারণীকরণ। এই ‘আমাদের’ বলতে হয়তো আমি আপনি অনেকেই, আবার হয়তো অনেকেই এই ‘আমাদের’ শব্দের গণ্ডিতে আঁটেন না।
  • লেখাটা পড়ে দুনিয়ার সব পুরুষ বাঘের মতো হিংস্র এরকম ধারণা করারও কোনো কারন নেই]

শিরোনাম কৃতজ্ঞতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উৎসর্গ: আকাশলীনা নিধি

[০৯ মে ২০১৫ তারিখে সচলায়তনে প্রকাশিত]

comments powered by Disqus