‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ এর সামনে যখন আমরা তন্দ্রাতে বিলোল ফুলকলি দর্শক হয়ে রই, আমাদের যখন ঘুম টুটেনা!

‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ এর সামনে যখন আমরা তন্দ্রাতে বিলোল ফুলকলি দর্শক হয়ে রই, আমাদের যখন ঘুম টুটেনা!

২০২২ সালের ২২ এপ্রিলের বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় যখন ঢাকার দর্শকেরা বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ঢুকছিলো ‘থিয়েটারিয়ান’ এর প্রযোজনা আর্থার মিলারের ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ নাটকটি দেখবে বলে, তখন সমস্তটা বেইলি রোড উপচে পড়ছিলো ঈদ পোশাকের ক্রেতা আর সংযমভোগী খাদ্যলোভীর ভীড়ে, লাইন ছিলো এটিএম বুথে আর ঝলমল করে উঠছিলো বিপনীর আলোকসজ্জিত সাইনবোর্ডগুলো। বিক্রেতার তখন ফুরসৎ নেই একটুও। আর নাটক শেষে যখন রাত গভীর, তখন মহিলা সমিতি মিলনায়তনের সামনের ঝালমুড়িওয়ালা উচ্ছিষ্ট ঘুঘনিভূনাটুকু দিয়ে ডিনার করাচ্ছেন এক ভিখিড়িকে, ফুটপাথে।

আর্থার মিলারের ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ যখন প্রথম অভিনীত হলো ব্রডওয়েতে, সেই ১৯৪৯ সালে- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ততোদিনে থেমে গেছে। কিন্তু যুদ্ধের ক্ষত রয়ে গেছে হিরোশিমার মাটিতে, নানকিং এর নারীদের শরীরে আর আউশভিৎস এর বাতাসে। পৃথিবীর মানচিত্রের সেই ব্যাপক পরিবর্তনের কালে যখন পুঁজিবাদ সম্পূর্ণ কব্জা করে ফেলছে মানুষকে, যদিও তারও প্রায় শতবর্ষ আগে কার্ল মার্কসের দাস ক্যাপিটাল লেখা শেষ… তখন আর্থার মিলারের নাটক ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ পৃথিবীতে নতুন করে আলোড়ন তৈরি করেছিলো। উল্লেখ্য তখনো বিক্রয় ডট কম প্রভৃতির জন্মদাতাদের জন্মও হয়নি পৃথিবীতে। তবু এই ২০২২ সালে যখন ঢাকার মঞ্চে অভিনীত হয় ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’, তখন তা যেন আগের সবগুলো সময়ের চেয়ে ভীষণ প্রাসঙ্গিক। মনে হয় এই একটি নাটকই এখন সারাবিশ্বের সবখানে একাধারে হতে থাকা উচিত। আবার মনে হয় আর্থার মিলার রচিত না হলেও পৃথিবীর নিরানব্বই ভাগ মানুষের জীবনে আর ঘরে ঘরে কী এই একটাই নাটক মঞ্চস্থ হয়ে আসছে না জীবনের পর জীবন ধরে? ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ তো আসলে বর্তমান বিশ্বের কাহানী ঘর ঘর কি!

‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ রচনার জন্য মিলার পুলিৎজার পেয়েছিলেন। যদিও ‘অল মাই সন্স’, ‘ক্রুসিবল’সহ আরো অনেক নাটক তিনি রচনা করেছেন; রেডিও নাটক, টিভি সিরিজ, সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন; করেছেন সাংবাদিকতাও- কিন্তু ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ তাঁর ম্যাগনাম ওপাস। এতোটাই যে মেরিলিন মনরোর স্বামী হয়েও আর্থার মিলার স্বনামেই বেশি খ্যাত। উল্লেখ্য ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ও চলচ্চিত্রায়িত। Volker Schlöndorff (জার্মান এই নামের বাংলা উচ্চারণ আমার দ্বারা অসম্ভব) পরিচালিত ডাস্টিন হফম্যান অভিনীত ১৯৮৫ সালের চলচ্চিত্রটি ইউটিউবেই পাওয়া যাবে, দেখেও নেওয়া যাবে মুফতে।

আর্থার মিলারের নাটক এর আগে দেখার সুযোগ হয়নি। শহীদ মুনীর চৌধুরীর পরিচালনায় ১৯৬১ সালে ড্রামা সার্কেল মঞ্চে এনেছিলো ‘সবাই আমার ছেলে’ (অল মাই সন্স), এর বাইরে তথ্য আমার জানা নেই। ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ পাঠ্য হিসেবে সবার উপরে থাকলেও মঞ্চায়ন ভীষণ দুরূহ। সেই ভীষণ দুরূহ কাজটিই করলো ঢাকার নতুন নাট্যদল ‘থিয়েটারিয়ান’।

ঢাকার নাটকের জনপ্রিয় দল ‘প্রাঙ্গনে মোর’ থেকে একটি অংশ বের হয়ে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর থিয়েটারিয়ান গঠন করেন। প্রায় বছর দেড়েক পর ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে তারা প্রথম দর্শকের সামনে এলো। ফতেহ লোহানীর অনুবাদে নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়ন। সহযোগি নির্দেশক ছিলেন রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ধীমান চন্দ্র বর্মণ। প্রথম নাটক হিসেবেই ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ করতে সাহস লাগে বটে, তবে শুধু সাহস থাকলেই এটা সম্ভব না, সঙ্গে প্রয়োজন সামর্থ্যও। সব অর্থেই ‘থিয়েটারিয়ান’ সে সামর্থের যথার্থ প্রমাণ দিয়েছে, অস্বীকারের উপায় নেই।

ঈদিপাস প্রভৃতি রাজা বাদশা দেবতাদের ঘাড় থেকে নেমে ট্র্যাজেডি যখন গরীব মধ্যবিত্তের ঘরেও ঢুকতে শুরু করলো, সেই আধুনিক ট্র্যাজেডি নাটকের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ আর্থার মিলারের ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’। (ট্র্যাজেডির প্রচলিত বাংলা ‘বিয়োগান্তক’, কমেডির ‘মিলনান্তক’ ঠিক যুৎসই লাগে না, তাই ইংরেজিই ভরসা আপাতত)। নাটকের সেলসম্যান বলতে যে বিক্রেতা উইলি নোমান- সে নিম্নবিত্ত, ধার দেনায় জর্জরিত, ইনস্যুরেন্সের কিস্তি শোধ দিতে দিতে বিধ্বস্ত। এই বিক্রেতা তবু আপ্রাণ পরিশ্রম করে যায় আজীবন শুধু ভবিষ্যতের একটু সোনালী সুখের আশায়। রবিঠাকুরের ভাষায় ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়, এমনই মায়ার ছলনা’।

উইলি লোমান কিংবা বর্তমান বিশ্বের নিরানব্বই ভাগ মানুষ যেমন একটুকু সুখ নামক মায়ার ছলনায় ভুলে গোটা জীবন অসুখি যাপন করে যায়, তবু সুখ মেলে না। লোমান কিংবা এই নিরানব্বই ভাগ মানুষ তখন স্বপ্ন দেখে সন্তানদের ‘মানুষ’ করে গড়ে তুলতে হবে, তাহলে বোধহয় অন্তত বৃদ্ধ বয়সে একটু সুখ জুটবে কপালে। সেই লালসায় উইলি আর লিন্ডা নিজেদের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে দুই পুত্রসন্তান বিফ আর হ্যাপিকে ‘মানুষ’ করতে উঠে পড়ে লাগে। যেভাবে হাওরের একজন কৃষক মাইক্রোক্রেডিটে ঋণ নিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হতেও সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায় বড় হয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার করার আশায়। কিন্তু সমস্যা হলো উইলির মতো আত্মসম্মানবোধের ঠ্যাটামো নিয়ে বর্তমান বাজারে চলা মুশকিল। তাই পৃথিবীর নিরানব্বই ভাগ মানুষের মতো উইলিও তাজ্জব কিংবা হতাশ হয়ে দেখে প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুদের সন্তানরাই শুধু সাফল্য পায়! নিজের ঘরে তার আর দেখা মেলে না।

ট্র্যাজেডির নিয়ম মাফিক নায়ককে শাকিব খান হলে চলবে না, তারও কিছু ভুলচুক থাকতে হবে, যা তাকে নিয়ে যাবে ট্র্যাজিক পরিণতিতে। উইলির যেমন আজীবন দুঃস্বপ্ন কিংবা অভিশাপ হয়ে রয় তার জীবনের পরকীয়ার অংশটুকু। স্কুল বয়সেই যা জেনে ফেলায় বড়পুত্র বিফ লোমানের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়, তার আর ‘মানুষ’ হয়ে ওঠা হয় না, বাপকে ঘৃণা করতে করতেই জীবন ধ্বংশ হয়ে যায়।

ওদিকে বৃদ্ধ উইলি যখন বাজার অর্থনীতির হিসেবে বাতিল হয়ে গেছে, যখন সে সঞ্চয়হীন নিঃস্ব অসহায়… তখন সে যখন ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে ঘরে ফেরে, যখন বড়পুত্র বিফও ফিরেছে বাড়িতে… সেই রাত থেকেই শুরু হয় নাটকের। পরবর্তী রাত পোহাবার আগেই যে উইলি নিজেকে বেচে দেবে বাজারের ভোগে, বেঁচে রইবে না আর, বেছে নেবে স্বেচ্ছামৃত্যু। নিজের মৃত্যুর বিনিময়ে সে সন্তানদের সুখের জন্য রেখে যেতে চাইবে তিলে তিলে সঞ্চয় করা জীবন বীমার পলিসির ২০ হাজার ডলার!

তাতে কী সুখ মিলবে সন্তানদের?

বিশ্বযুদ্ধগুলো শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই, রাশিয়া ইউক্রেনও বিশ্বযুদ্ধটা ঘটিয়ে দিতে পারলো না বলে যারা হতাশ কিংবা স্বস্তিতে আছেন, তারা জানেনই না যে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিশ্বযুদ্ধটা চলছে অনেক অনেক বছর ধরেই। সেই যুদ্ধ পুঁজির সঙ্গে মানুষের। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এর সৈনিক। একভাগ লোকের বিপক্ষে লড়ছে না- ক্রমাগত হেরে চলেছে বাকী নিরানব্বই ভাগ মানুষ। হারতে হারতে লড়াই করার সব বোধ হারিয়েছে যে মানুষগুলো- সেই মানুষগুলোকে নিয়ে এই নাটক- ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’।

আগেই বলেছি এ নাটক মঞ্চায়ন ভীষণ দুরূহ একটি কাজ। এক বাক্যে বলে দেওয়া ভালো যে সেই দুরূহ কাজটি যথেষ্ট সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছে নতুন দল ‘থিয়েটারিয়ান’। তাদেরকে ধন্যবাদ, স্বাগত। আর এই কাজটি করার কান্ডারি হিসেবে তারা বেছে নিয়েছেন যে দুজনকে- আশিকুর রহমান লিয়ন আর তাঁর সহকারি ধীমান চন্দ্র বর্মণ- তাঁদেরকেও ধন্যবাদ এই ভীষণ কর্মটি করার সাহসের জন্য। নয়তো হয়তো আর্থার মিলার না দেখেই মরে যেতে হতো নজরুল সৈয়দ নামের এই অধম সেলসম্যানকেও।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মঞ্চ নাটকের উদ্বোধনী শো দেখতে আগ্রহী হই না। কারন বরাবরই দেখেছি প্রথম শো-তে বেশকিছু ত্রুটি অসঙ্গতি ইত্যাদি থেকেই যায়। অন্তত গোটা দশেক শোয়ের পর ধীরে ধীরে অভিনেতা কলা কুশলীদের কাছে সহনশীল হয়ে উঠতে থাকে সব দক্ষযজ্ঞ। কিন্তু পাঠক হিসেবে আমি ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’-এর এতোটাই অনুরক্ত যে প্রথম শো দেখার লোভ সম্বরণ করতে পারিনি, বৃষ্টি ঠেলেই হাজির হয়েছি।

ফলে স্বভাবতই কিছু অসঙ্গতিরও সম্মুখিন হয়েছি। নাটকের আগে এবং পরের আনুষ্ঠানিকতা, নাটক চলার সময়ে এদিকে সেদিকে ভিডিও ক্যামেরার দাপট ইত্যাদি তো ছিলোই; লাইট, সাউন্ড, মিউজিকের অসঙ্গতিগুলোও পীড়া (চলতি ভাষায় প্যারা) দেয়। যদিও এর আগে তিনটি টেকনিক্যাল শো হয়েছে, তবু দর্শক হিসেবে জানি প্রথম শোতে এরকম কিছু ভুলচুক হয়েই যায়, কয়েক শো পর এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। তাই সেগুলো নিয়ে কথা এখন না বলাই ভালো। যদিও জানি অন্তত একটা বিষয় কখনোই ঠিক হবে না, কারন এটা প্রযোজনা দলের আয়ত্বে তেমন একটা নেই- দর্শকের সেলফোন। আমি বুঝতেই পারলাম না আমার সামনের সারির জনাবা দর্শক কেন ৫০০ টাকা খরচ করে মহিলা সমিতি মিলনায়তনে এসেছেন আড়াই ঘন্টা ফেইসবুকিং করতে! ঘরে বসেও তো পারতেন। অবশ্য তিনি দুয়েকবার মঞ্চে চোখ তুলে ফোন-ক্যামেরাও তাক করেছেন, ছবি তুলেছেন, লাইভও করেছেন বোধহয়। সেই হিসেবে তিনি যে বেশ আর্ট কালচারের মানুষ, মঞ্চ টঞ্চও দেখেন- সেই ডাঁট নেওয়ার খরচাটা কম হয়ে গেলো, হাজার টাকার টিকিট কিনলে অন্তত মান থাকতো।

যাক সেকথা… আগেই বলেছি এক বাক্যে বলা যায় নাটকটি বেশ ভালো হয়েছে। মুহুর্মূহু অতীত-বর্তমান, বর্তমান-অতীত করতে থাকা দৃশ্য আর চরিত্রগুলো সামলানো গেছে চমৎকার ডিজাইনে। যদিও উইলি যখন বর্তমান থেকে অতীতে যাচ্ছেন কিংবা অতীত থেকে ফিরছেন বর্তমানে, তখন সেই পরিবর্তনটা খুব দৃষ্টিগোচর হয়নি। অন্য চরিত্রগুলোর অবশ্য এই কষ্ট ছিলো না, প্রায় সবগুলোতেই দুই বয়সে দুইজন অভিনয় করেছেন।

মূল চরিত্র অর্থাৎ উইলি লোমান-এ অভিনয় করেছেন তৌহিদ বিপ্লব। একই চরিত্রে আরো একজন অভিনেতা আছেন, তিনি উর্মিল মজুমদার। যিনি দ্বিতীয় শো-তে অভিনয় করবেন। ফলে তার অভিনয় দেখা হয়নি। তৌহিদ বিপ্লব বেশ হাত-তালি পেয়েছেন দর্শকের, পুরো নাটকেই। কিন্তু নাটকের একেবারে শুরুতেই তিনি নাটকের স্বর এতোটা চড়িয়ে দিয়েছেন যে পুরো নাটকটাই ভীষণ উচ্চকণ্ঠী মনে হচ্ছিলো। কানে বাজছিলো, কষ্ট হচ্ছিলো। মাঝে মধ্যেই মনে হচ্ছিলো সবাই মিলে যেন খুব চিৎকার করছে।

হয়তো এটা পরিচালকের ইচ্ছাকৃত। হয়তো এটাই ডিজাইন। এই নিচুতলার মানুষগুলো, যারা কখনও উচ্চকণ্ঠ হয়ে উঠতে পারে না, যাদের জীবন বেড়ালের মতো মিঁউমিঁউ, তাদের অসহায় চিৎকারটাই তুলতে চেয়েছেন নাটকে। কিন্তু তাতে অসুবিধে যা হয়েছে- আড়াই ঘন্টার নাটকে যেখানে সত্যিই চিৎকারের প্রয়োজন, সেটুকু আর আলাদা হয়ে উঠতে পারেনি।

অথচ হলে খুব ভালো হতো। এই ঝাঁ চকচকে বিপুলায়তন মঞ্চ, আলো, ধোঁওয়া, মিউজিক, পোশাক আর হাত-তালিময় অভিনয়ের আড়ালে কোথাও গিয়ে দর্শকের বোধ জাগ্রত হয় না পুঁজিবাদ-বিরোধে। আড়াই ঘন্টা নাটক ‘উপভোগ’ এর পর কিছু দর্শক সেই জনাবা দর্শকের মতো ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে ভুলে যাবেন, কিছু দর্শক খুব ‘দারুণ করেছো’ বলে পিঠ চাপড়ে আড়ালে ‘বালটা হইছে’ বলে নিজেদের দলে হাসাহাসি করবেন, কেউ কেউ আমার মতো আজাইরা এসব আগডুম বাগডুম লিখে নিজেকে ‘আর্ট কালচার জানা জ্ঞানী’ প্রমাণ করার চেষ্টায় মাতবেন। খুব কম মানুষই হয়তো উপলব্ধি করবেন পুঁজিবাদের সেই ভয়াল ত্রাস; যা ক্রমশ পোশাক হয়ে, গ্যাজেট হয়ে, গাড়ি-বাড়ি-নারী হয়ে, রোগের ঔষধ হয়ে, বিনোদন হয়ে, এমনকি শিক্ষা হয়েও আমাদের গ্রাস করছে। কীভাবে আমরা হীনমন্য হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি কেবল, কীভাবে আমরা ক্রমশ হারতে হারতে এখন আর হারটা স্বীকার না করে পরাজয়টাকেই গলার হার করে নিয়েছি।

অথবা হয়তো নাটক কিংবা পরিকল্পনার কোনো দোষ নেই, হয়তো আমরাই গণ্ডারের চামড়ার এই মার্কেট ইকোনোমির কারসাজিতে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে অভিনেতা আর কলা কুশলীরা সবাই মিলে ঝাঁক বেঁধে নেমে এসে সব দর্শককে ঝাঁকি দিয়ে ‘ঐ ব্যাটা, এইটা কোনো বিনোদন না, তুই নিজে ঐ উইলির মতো পরাজিত একজন সেলসম্যান ছাড়া আর কিছু না, বুঝছস?’ বলে চড় থাপ্পড় মারলেও হয়তো আমাদের বোধের উদয় হতো না। আমরা হয়তো এখন এতোটাই নির্জীব হয়ে গেছি।

এরকম অনেক অনেক নাটকে অনেক অনেক চিৎকার হোক, তবু যদি আমাদের মতো তন্দ্রাতে বিলোল ফুল কলিদের ঘুম টুটে কিছুটা।

………………………………………………………………………………………….

নাটক: ডেথ অব আ সেলসম্যান

রচনা: আর্থার মিলার

অনুবাদ: ফতেহ লোহানী

নির্দেশনা: আশিকুর রহমান লিয়ন

নির্দেশনা সহযোগি: ধীমান চন্দ্র বর্মণ

প্রযোজনা: থিয়েটারিয়ান

প্রথম প্রদর্শনী: ২২ এপ্রিল ২০২২, মহিলা সমিতি মিলনায়তন, বেইলি রোড, ঢাকা

অভিনয়ে:

উইলি লোমান- তৌহিদ বিপ্লব, উর্মিল মজুমদার

লিন্ডা- পলি চৌধুরী, তাসমিয়া মীম

বিফ লোমান- মোঃ মাইনুল ইসলাম (তাওহীদ)

বিফ লোমান (ছোট)- রাম কান্ত মন্ডল শ্রীকান্ত

হ্যাপি লোমান- নাজমুল নাঈম

হ্যাপি লোমান (ছোট- নাজমুল নাঈম

চার্লি- আমিরুল মামুন

বেন- আব্দুল হাই

স্ত্রীলোক- তাসমিয়া মীম, পলি চৌধুরী

হাওয়ার্ড- আব্দুর রহমান সোহাগ

বার্নাড- লিটু রায়

বার্নাড (ছোট)- পৃথু অভিষেক

স্টানলি- সায়েদুর রহমান (নয়ন)

ফোরসাঈদ- ফারাবী জামান শেহজাদী

লেটা- অর্নিলা অচিন

নেপথ্যে:

মঞ্চরূপ- আশিকুর রহমান লিয়ন

আলোক পরিকল্পক- ধীমান চন্দ্র বর্মণ

পোশাক পরিকল্পক- কাজী তামান্না হক সিগমা

আবহ সঙ্গীত পরিকল্পক- নাভেদ রহমান

রূপসজ্জা- জনি সেন

আবহ সঙ্গীত প্রক্ষেপণ- নাভেদ রহমান, ফারজানা মহুয়া

আলোক প্রক্ষেপণ- ধীমান চন্দ্র বর্মণ, রুহুল আমিন রাজা

পোস্টার ডিজাইন- দেবাশীষ কুমার দে প্রশান্ত

প্রকাশনা- রিগ্যান সোহাগ রত্ন

প্রচার- আবু হায়াত মাহমুদ, তৌহিদ বিপ্লব, আহমেদ সুজন ও জয়নাল আবেদিন মনির

  • ব্যবহৃত বিদেশী ছবিগুলো নেওয়া হয়েছে গুগল সার্চের মাধ্যমে বিভিন্ন সাইট থেকে আর থিয়েটারিয়ান প্রযোজিত নাটকের ছবিগুলো নেওয়া হয়েছে মাইনুল তাওহীদ এর ফেইসবুক ওয়াল থেকে (অনুমতি নেওয়া হয়নি, সেজন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। আপত্তি করলে সরিয়ে দেবো)।
comments powered by Disqus