প্রত্যেক গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক চাই

প্রত্যেক গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক চাই

ডাংগুলি হাতে যে কিশোরটি এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রাম, সে হয়তো জানে না আজ থেকে ৪৪ বছর আগে এখানে তার মতোই আরেক কিশোর অস্ত্র হাতে মরনপণ লড়াই করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। যে নদী সে সাঁতরে পার হয়ে যাচ্ছে অনায়াসে, জানে না ৭১ সালে তার মতো এক কিশোর দু ইঞ্চি মর্টারের গোলা মেরে ডুবিয়ে দিয়েছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গানবোট, বুকে গুলি বিঁধলে ক্ষতস্থান গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। যে কিশোরী মেয়েটি ক্লাসরুমে বেঞ্চে বসে কোকিলের ডাক শুনে পুলকিত হয়, সে হয়তো জানে না এই স্কুলে তার বয়সী এক কিশোরীই কী পরিমান নীপিড়নের শিকার হয়েছিলো। তারা জানে না, কারন তাদের জানার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রাম আক্রান্ত হয়েছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বারা। প্রায় প্রতি গ্রামেই রাজাকার ও শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিলো। প্রায় প্রতি গ্রামেই মানুষ হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। আর প্রায় প্রতি গ্রামেই মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, যুদ্ধ করেছে, মুক্ত করেছে। কিন্তু গ্রামগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মারক নেই। ৪৪ বছর আগে যেখানে তুমুল যুদ্ধ হয়েছিলো, সেখানে এখন হয়তো গরু চড়ে, রাখাল জানে না ইতিহাস।

খুব সামান্য একটা দাবী জানাই, প্রতি গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের একটা করে স্মারক বা স্মৃতিফলক চাই। স্কুলের পাশে বা বাজারের পাশে হতে পারে। ছোট একটি জায়গায় একটি স্তম্ভ করে তাতে শ্বেতপাথরে খোদাই করে লেখা থাকবে ঐ গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, শহীদদের নাম আর স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম। যাতে ঐ গ্রামের প্রতিটি মানুষ জানতে পারে মুক্তিযুদ্ধে নিজ গ্রামের ঘটনাগুলো। চিহ্নিত করতে পারে ব্যক্তিকে। আর পর্যটকরাও একটা গ্রামে গেলে খুব সহজেই মুক্তিযুদ্ধে এই গ্রামের ঘটনাগুলো জানতে পারবে।

এই স্মারক বা স্মৃতিফলককে কেন্দ্র করেই প্রতি গ্রামে নতুন করে শুরু হতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চর্চা। জাতীয় স্বার্থেই যে চর্চাটা এখন খুব জরুরী।

এখনো প্রতিটি গ্রামেই মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীরা বেঁচে আছেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল আছে, এখনো প্রতিটি গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করা সম্ভব। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে এই দাবীটুকু রেখে গেলাম।

[২৯ জুন ২০১৫ তারিখে সচলায়তনে প্রকাশিত]

comments powered by Disqus