স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের হোসনে আরা

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের হোসনে আরা

হোসনে আরা ছিলেন চট্টগ্রাম বেতারের একজন ঘোষক। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বিকেলে যখন বেলাল মোহাম্মদ, মাহবুব হাসান, আবুল কাসেম সন্দ্বীপ ও আব্দুল্লাহ আল ফারুক কালুরঘাটে যাওয়ার জন্য কোনো বাহন পাচ্ছেন না, তখন গাড়ি নিয়ে এগিয়ে এলেন হোসনে আরা, তুলে নিলেন চারজনকে। পরিচয় করিয়ে দিলেন চাচা ডাক্তার আনোয়ার আলীর সঙ্গে। যিনি তুলে দিলেন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। বেলাল মোহাম্মদ তা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন ”বাহ্, এটা দিয়েই শুরু হবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র”

চার বেতার যোদ্ধাকে নিয়ে হোসনে আরা ছুটলেন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের দিকে, সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা।

কালুরঘাট গিয়ে আরেক বিপত্তী, বেতার কেন্দ্রের কর্মীরা তখন পালাতে ছুটছেন। বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সাহস নেই। ইপিআর ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম কজন সশস্ত্র সৈনিক দিতে রাজী হলেন। হোসনে আরার গাড়ি আবার ছুটলো তাঁদের আনতে। নিরাপত্তা মিললো, শুরু হলো অনুষ্ঠান পরিকল্পনা। অনুষ্ঠান ঘোষণা করবে কে?

হিসেবে হোসনে আরারই করার কথা। বেলাল মোহাম্মদ তাঁকে বললেন “আপনার উপস্থিতিতে আমরা উৎসাহিত। কিন্তু আমাদের এটি একটি গুপ্ত বেতার কেন্দ্র। আমরা শুধু কেন্দ্রের নাম প্রচার করবো। স্থানের উল্লেখ করবো না। এখানে মহিলা কর্মীর সমাবেশ শোভন দেখাবে না। বিশেষ করে রক্ষণশীল শ্রোতাদের কাছে।”

বেলাল মোহাম্মদ নিজেই লিখেছেন “যুক্তিটি হোসনে আরার মন:পুত হয়েছিলো কি না, জানি না। পরে আর তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি।”

কোমলমতি নারীদের দিয়ে বিপ্লব হয় না, তাই পুরুষকণ্ঠে প্রচার হলো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। তাতেও বিপ্লব ঠিক জমছিলো না, প্রয়োজন হয়ে পড়ছিলো আরো ‘বলিষ্ঠ’ কিছুর। তাই বেলাল মোহাম্মদ পরদিন গিয়ে হাজির হলেন মেজর জিয়ার কাছে। তাকে অনুরোধ করে ধরে নিয়ে এলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাও যথেষ্ট মনে হচ্ছিলো না, লেখা হলো নতুন ঘোষণা। পাঠ হলো। তারপরের ইতিহাস সবার জানা।

মুক্তিযুদ্ধে বেলাল মোহাম্মদদের অবদান খাটো করে দেখার কিছু নেই, এই ঘটনার জন্য তাকে রাজাকার বানিয়ে দেওয়ারও কিছু নেই, গালি গালাজেরও প্রয়োজন নেই। তবু যখন মনে হয় কতোটা কষ্ট নিয়ে হোসনে আরা সেদিন ফিরে এসেছিলেন কালুরঘাট থেকে, কতোটা অভিমান নিয়ে আর কোনোদিন যোগাযোগ করেননি… তখন বিষাদে ভরে ওঠে মন।

হোসনে আরা এখনো বেঁচে আছেন কি না জানি না, বস্তুত এরপর আর তাঁর কোনো খোঁজই জানি না। চট্টগ্রামের কেউ যদি তাঁর পরিচয় জানেন, একটু জানাবেন দয়া করে।

যাহোক, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে।

[৮ মার্চ ২০২০ তারিখে নারী দিবস উপলক্ষ্যে ফেসবুকে প্রকাশিত]

comments powered by Disqus